প্রিয় ‘শিরোনামহীন’,
আমাকে এভাবে তুমিও কি কষ্টের সাগরে ভাসিয়ে গেলে। ভাবতেই পারছিলাম না তুমিও এত পাষাণ হতে পারো! আমাদের এত দিনের স্বপ্ন ও সুখানুভূতি গুলো এভাবে ভুলে গেলে? পত্র পাওয়া মাত্র উত্তর দেওয়ার ক্ষেত্রে যাতে কোন কার্পণ্য না হয়।
ইতি, ‘চৈতী’।
সুপ্রিয় ‘চৈতী’,
আমার নাম ‘শিরোনাম’, তবে তার সাথে ‘হীন’ যোগ করে তুমি আমাকে এভাবে কষ্ট দেবে তা আমি কখনো ভাবতে পারি নি! চৈত্র মাসে তুমি ‘চৈতী’ কিন্তু অন্য মাসে তুমি আমার কাছে ‘ইতি’ মানে ‘শেষ’। তাই তোমার সাথে এত প্রেমকাহিনী ঘটে যাওয়ার পরও তোমার গল্পে ‘শিরোনাম’ হয়ে থাকার জন্য তোমাকে দেওয়া কথা রাখলাম না। এজন্য আমাকে তুমি ক্ষমা করতে পারলেও কখনো ক্ষমা করিও না।
ইতি, ‘আত্মভোলা শিরোনাম’।
‘চৈতী’ একটি গ্রামের সহজ-সরল এক মেয়ে । এখন বয়স প্রায় আটার এর কোটায় । ছোট থেকে এই বয়স পর্যন্ত যেন সবাই তাকে ভালোবাসার কথাই বলে গেল কিন্তু কেউ ভালোবেসেছে, কেউবা ভালোবাসেনি, আবার কেউ ভালোবাসার চেষ্টাও করে নি। কেউ কষ্ট পেতে চাইনি কিন্তু চৈতীকে কষ্ট দিয়ে গেল।
জন্মের পর থেকেই চৈতীর জীবন বড় দুঃসহ, বড় করুণ । যখন সে একটু একটু বুঝে উঠতে শিখল তখন তার বাবা-মা তাকে অনেক বড় বড় স্বপ্ন দেখাল । তারা বলেছিল, চৈতীকে ডাক্তার বানাবে। ডাক্তার হয়ে যাতে সে গ্রামের দরিদ্র লোকদের সেবা করতে পারে।এভাবে ভাবিত স্বপ্নের মধ্য দিয়ে এক-এক বছর করে চৈতী বড় হতে লাগল ।
যখন চৈতীর বয়স আট বছর তখন হঠাৎ করে চৈতীর বাবা একটি অজ্ঞাত রোগে মারা গেল । জীবনের প্রথম ধাপে চৈতী একটি বড় দুঃখ পেল প্রিয় বাবার অকাল মৃত্যুতে । তখন সে ভাবতে লাগল, বাবা থাকলে হয়ত স্বপ্ন পূরণ হত, এখন কিভাবে বাবার স্বপ্ন পূরণ হবে। বাবার স্বপ্ন পূরণ না হওয়ার চেয়ে বাবার চলে যাওয়াটাই যেন চৈতীর কাছে বড় দুঃখের । বাবার ভালোবাসা থেকে চৈতী অল্প বয়সেই যেন বঞ্চিত হল ।
চৈতীর বাবার মৃত্যুর এক বছরের মধ্যে মা অন্য এক পুরুষের সাথে পালিয়ে গেল। চৈতী এতে আরও বেশি দুঃখ পেল । সে ভাবল, নিজের হীন স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য মানুষ কি করতে না পারে! বাবা মারা গেল, তারপর মাও পালিয়ে গেল, এখন চৈতীর আর কিই-বা যাওয়ার আছে। এখানে চৈতীর আরও একটি ভালোবাসার উৎস নিঃশেষ হল।
বাবা কথা রাখতে পারেনি হয়তো না ফেরার দেশে চলে যাওয়ার কারণে কিন্তু পাষাণী মা কেন এমন করলো তা চৈতী বুঝে উঠতে পারে না!
মা চলে যাওয়ার পর চৈতী চাচার পরিবারে বড় হচ্ছিল । চাচা চৈতীকে অনেক ভালোবাসে । তাই লেখাপড়া চালিয়ে যেতে তিনি চৈতীকে সব ধরণের সহযোগিতা করতে লাগলো । চাচা চৈতীকে বলল, তুই আমার মেয়ের মতো, তোর যখন যা প্রয়োজন হবে আমার কাছ থেকে চেয়ে নিবি । কয়েক মাস ভালোভাবে চলল। এরপর চৈতীর জীবনে আবার কাল হয়ে এল তার চাচী । চৈতীর প্রতি স্বামীর আন্তরিকতা চাচী মেনে নিতে পারল না । চৈতীর প্রতি চাচার বিভিন্ন সহযোগিতায় সে বাধা দিতে লাগলো। যদিও চাচা লুকিয়ে তার সব ধরণের খরচ বহন করত। চৈতী বিভিন্ন প্রতিকূলতার মধ্যেও চাচার পরিবারে বড় হচ্ছিল এবং লেখাপড়াও চালিয়ে যেতে লাগলো । দেখতে দেখতে সে এস.এস.সি পাস করলো।এরপর একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি হল । কলেজে ক্লাস শুরু হওয়ার পর কিছু দিনের মধ্যে একটি ছেলের সাথে চৈতীর বন্ধুত্ব গড়ে উঠলো । চৈতীও ধীরে ধীরে কিছু যেন অনুভব করতে লাগলো । তার মনে প্রেম নামক কিছু একটা বাসা বাঁধতে লাগলো । সেই ছেলেটির সাথে বছর খানেক খুব জোরেশোরে প্রেম চলেছিল । তবে ছেলেটি চৈতীকে সত্যিকার অর্থে ভালোবেসেছিল। হঠাৎ তাদের মধ্যে কি যেন হয়েছে। এতে করে ছেলেটি চৈতীকে ভুল বুঝল। সেখানেই সেই প্রেমে ফাটল দেখা দিল। ছেলেটি চৈতীকে কথা দিয়েছিল কোনোদিন ভুলে যাবে না। কিন্তু সে কথা রাখল না।
সেই অভিমানী চৈতী কিছুদিন না যেতেই অন্য এক ছেলের প্রেমে পড়ে গেল। নাম তার ‘শিরোনাম’। সেই প্রেম-ভালোবাসা এইচ.এস.সি পরীক্ষা পর্যন্ত গড়াল। এই ছেলেটিও চৈতীকে কথা দিয়েছিল ভুলে না যাওয়ার, ফেলে না যাওয়ার। কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস! এইচ.এস.সি পরীক্ষার পর ছেলেটি অন্যত্র চলে গেল। গল্পের শুরুতে যে পত্রটি আমরা পড়েছি তা আসলে সেই শেষ ছেলেটিকে লেখা, যে চৈতীকে ভালোবাসার নামে কষ্টের সাগরে ভাসিয়ে গেল। এই রকম ভালোবাসার নামে কষ্টের গল্প সহজে কাউকে যায় না বলা।
ওগো চৈতী (কাল্পনিক নাম ), আমি লেখক হয়ে তোমার দুঃখের কাহিনী (কাল্পনিক কাহিনী) খুব কাছ থেকে অনুভব করেছি, করছি এবং করবো। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে, আমি তোমাকে ভালবেসেছি বা ভালবাসতে চেয়েছি। কারণ একটাই সেটা হল, আমি ভালবেসে কাউকে কষ্ট দিতে পারিনা। তবে প্রেম-ভালবাসা বা স্বার্থের জন্য নয় বরং একজন মানবিক গুণাবলীসম্পন্ন মানুষ হিসেবে তোমাকে ভালবাসি। যে ভালবাসা হতে পারে বোনের প্রতি ভাইয়ের ভালবাসা, সন্তানের প্রতি পিতামাতার ভালবাসা, অথবা মানুষের প্রতি মানুষের ভালবাসা। ভালবাসি তোমায়। ভালো থেকো চিরদিন.....................।।
১৯ নভেম্বর - ২০১১
গল্প/কবিতা:
১৩ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪